শুধু পানির মধ্যেই চিংড়ির পরিবেশ সীমাবদ্ধ নয় বরং মাটির গুণাগুণের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। কারণ মাটি পানিকে ধারণ করে রাখে। এক্ষেত্রে দোআঁশ মাটি ঘের নির্মাণের ক্ষেত্রে উত্তম। কারণ দোআঁশ মাটির পানি ধারণক্ষমতা ও উর্বরতা বেশি। দোআঁশ মাটির পানিতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে লাল মাটির ঘের বা পুকুরের পানি অধিকাংশ সময় ঘোলা থাকে। বেলে মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা খুবই কম। তবে এঁটেল মাটি ও লাল মাটিতে চিংড়ি চাষ করা যেতে পারে। তাছাড়া পানির গুণগত মানের ওপর চিংড়ি চাষের সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই পানিতে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, হাইড্রোজেন ও সালফার গ্যাসের পরিমাণ সর্বোত্তম পর্যায়ে রাখা উচিত। অন্যথায় চিংড়ির মহামারী দেখা দিতে পারে। জৈব পদার্থ সরল রাসায়নিক পদার্থে রূপান্তরের জন্য ঘেরে যথেষ্ট পরিমাণ সূর্যের আলো নিশ্চিত করতে হবে। পানির দূষণ চিংড়ির মহামারীর অন্যতম কারণ। যেমন- পানিতে অব্যবহৃত খাবার, নোংরা জৈব সার, অধিক গুল্ম আগাছা, বৃষ্টি বিধৌত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ইত্যাদির উপস্থিতি। তবে সুষ্ঠু চাষ ব্যবস্থাপনার অভাবে চিংড়িতে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে।
চিংড়ির ভাইরাসজনিত রোগের কোন চিকিৎসা না থাকায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়াই উত্তম। যেমন- উত্তম উপায়ে ঘের তৈরি, পিসিআর পরীক্ষিত পোনা মজুদ, পরিমিত হারে সার ও খাবার প্রয়োগ ইত্যাদি। রোগ প্রতিরোধে তিনটি বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি যেমন- চিংড়ি (হোস্ট), জীবাণু ও পরিবেশ। চিংড়ি হঠাৎ কোনো ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হলে এবং তাৎক্ষণিকভাবে (২-৩ দিনের মধ্যে) চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থ হলে খামারের সব চিংড়ি মারা যেতে পারে। সুতরাং চিংড়িকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষার্থে নিম্নে বর্ণিত
বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত-
ক. সুস্থ, সবল, রোগমুক্ত ও কৌলিতাত্ত্বিক গুণগত মানের পোনা ছাড়তে হবে।
খ. পরিমিত মাত্রায় সুষম খাবার প্রদান করতে হবে।
গ. পানির গুণগত মানের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে এবং পরিবর্তন হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঘ. পুকুরের তলদেশ পরিষ্কার রাখা ও পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ঙ. পুকুরে কোন রোগের আক্রমণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগের শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
চ. পানির গুণগতমান নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যেমনঃ পিএইচ, স্বচ্ছতা, পানির তাপমাত্রা ইত্যাদি।
ছ. পরিমাণ মতো অক্সিজেন সরবরাহে পেডেল হুইলের ব্যবস্থা করতে হবে।
জ. পরিমিত পরিমাণে সার প্রদান করতে হবে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদিত হয়।
পানির গুণাগুণ রক্ষায় নিম্নবর্ণিত বিষয়ের ওপর বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন:
ক) তাপমাত্রা: যে কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রেই বিপাক ক্রিয়ায় তাপমাত্রা পুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তেমনি চিংড়ির বিপাক ক্রিয়ায়ও তাপামাত্রার গুরুত্ব অপরিসীম। চিংড়ির বৃদ্ধির জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হল ২৮-৩২ ডিগ্রি সে.। ৩৫ ডিগ্রি সে. এর বেশি ও ২৫ ডিগ্রি সে. এর কম তাপমাত্রায় চিংড়ি দুর্বল হয়ে মৃত্যুবরণ করে। পানির তাপমাত্রা যদি ১৩ ডিগ্রি সে. এর নীচে ও ৩৪ ডিগ্রি সে. এর উপরে হলে চিংড়ির ব্যাপক মহামারী দেখা যায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে খাবার ও সার প্রয়োগ কম বা বেশি করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পরিবর্তন করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সনাতন ও হালকা উন্নত পদ্ধতির চাষের পুকুরে গভীরতা সর্বদা ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে পানির তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য খামারের ভেতরে চারদিকে কোনাকুনি নালা থাকা প্রয়োজন। নার্সারির পানির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ৪-৬% এলাকায় কচুরিপানা রাখা যেতে পারে।
খ) দ্রবীভূত অক্সিজেন: বাগদা চিংড়ির অক্সিজেন চাহিদা বেশি হওয়ায় চিংড়ি চাষের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চিংড়ি চাষের জন্য অক্সিজেনের আদর্শ পরিমাপ হল ৫-৭ পিপিএম।
সারণি: বাগদা চিংড়ি চাষে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের প্রভাব
তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও বায়ুচাপের ওপর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ভর করে। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের উৎস হল বাতাস ও সালোকসংশ্লেষণ। রাত্রিকালে উদ্ভিদের শ্বাস গ্রহণ, প্রাণীকূলে শ্বাস গ্রহণ ও পচনশীল জৈব পদার্থের পচন এর কারণে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়ে থাকে। পানিতে অক্সিজেন হ্রাসের কারণে চিংড়ির ক্ষুধামন্দা, দৈহিক ক্লেশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, দৈহিক বৃদ্ধির ব্যাঘাত, শ্বাস প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি এবং মারা যায়। সাধারণত মেঘলা দিনে, খুব গরম পড়লে এবং মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত পুকুরে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। পুকুরে অক্সিজেন হ্রাসের লক্ষণসমূহ নিম্নরূপ-
১। চিংড়ি পানির উপরিভাগে এসে খাবি খাবে।
২। পুকুরে বুদবুদ আকারে গ্যাস উঠতে দেখা যায়।
৩। পানির উপর স্বরের মতো বুদবুদ জমা হয়।
৪। চিংড়ি এদিক ওদিক ছুটাছুটি করবে।
৫। মরা মাছের মত চিংড়ি পানির উপরে ভেসে উঠবে ও ফুলকা ছেড়ে যাবে।
সারণি: বিভিন্ন তাপমাত্রায় পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ
রাতের বেলায় আলো না থাকায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে কিন্তু চিংড়ি অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। তাই ভোরের দিকে অক্সিজেন সংকট দেখা যায়। আবার যে পুকুরে ফাইটোপ্লাংকটন বেশি থাকে সেখানে দিনের ভাগে আলোর উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষণ বেশি হওয়ায় বিকালের দিকে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে।
নিম্নোক্ত উপায়ে পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়-
গ) পানির লবণাক্ততা: লবণাক্ততার কারণে দক্ষিণাঞ্চল চিংড়ি চাষের উপযোগী। লোনা পানিতে চিংড়ির ভাল উৎপাদন হয়। সাধারণত ৮-১৪ পিপিটি লবণাক্ত পানি বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী। একটানা প্রখর সূর্যতাপের কারণে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেশি হয়। পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ২৫ পিপিটি এর বেশি হলে পানি সরবরাহ করে লবণাক্ততার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রিফ্লাক্টোমিটারের সাহায্যে পানির লবণাক্ততার পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।
ঘ) অ্যামোনিয়া (NH3): জলজ প্রাণীর বিপাক ক্রিয়া ও পুকুরে পুঞ্জিভূত জৈব পদার্থের পচন থেকে অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়। উচ্চ অ্যামোনিয়া জলজ প্রাণির জন্যে সব থেকে বিষাক্ত পদার্থ। পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ০.০৫ মিলিগ্রাম/ লিটার এর বেশি হলে মাছের ফুলকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আয়নিত অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ০.১ পিপিএম এর বেশি হলে বৃদ্ধির হার অর্ধেক এ নেমে আসে। পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ পানির পিএইচ এর সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন- পানির পিএইচ বৃদ্ধির সাথে সাথে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে পানির রং তামাটে বা কালচে রংয়ের হয় ফলে চিংড়ির ছোটাছুটি বেড়ে যায় এবং চিংড়ি মারা যায়। অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণে চিংড়ির মজুদ ঘনত্ব কমাতে হবে। সার ও খাদ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিকার হিসেবে প্রতি শতাংশে ২০০-২৫০ গ্রাম জিওলাইট দিতে হবে।
ঙ) নাইট্রাইট (NO2); নাইট্রাইটের পরিমাণ বেড়ে গেলে চিংড়ির দেহে অক্সিজেন সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয় এবং বিষাক্ততার সৃষ্টি করে। এতে চিংড়ি বাদামী রং ধারণ করে এবং খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। নিরাপদ চিংড়ি চাষের জন্য নাইট্রাইটের মাত্রা ০.১ পিপিএম এর নীচে রাখা জরুরি। প্রতিকার হিসেবে চিংড়ির ঘনত্ব হ্রাস ও পানি পরিবর্তন করে ২৫০ মিলিগ্রাম/লিটার হারে লবণ দিতে হবে।
চ) নাইট্রেট (NO3): নাইট্রেট খুব বিষাক্ত নয় বরং শেওলার পুষ্টি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে নাইট্রেটের উচ্চ ঘনত্বের সংস্পর্শে থাকলে চিংড়ির অ্যান্টেনার দৈর্ঘ্য ছোট হয়, ফুলকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হেপাটোপ্যানক্রিয়াস এ ক্ষত সৃষ্টি হয়। নাইট্রেটের পরিমাণ ২০ পিপিএম এ রাখা চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে উত্তম।
ছ) খরতা ও ক্ষারত্ব: খরতা ও ক্ষারত্বের মধ্যে সামঞ্জস্যতা নষ্ট হলে পানির নিরপেক্ষকরণ ক্ষমতা কমে যায় এবং পিএইচ এর স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় ফলে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বাধ্যগ্রস্ত হয় এবং চিংড়ির বৃদ্ধি কমে যায়। খরতা ও ক্ষারত্বের মান ৪০-২০০ মিলিগ্রাম/লিটার চিংড়ি চাষের জন্য উত্তম। ঘের/পুকুর তৈরির সময় গড়ে শতাংশ প্রতি ১-২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া ছাই ব্যবহারে পানির ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
জ) পিএইচ (pH): চিংড়ি চাষে পুকুরের পানির পিএইচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ঘেরের পানির পিএইচ সকালের দিকে ৭.৫-৮.৫ চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপকারী।
সারণি: চিংড়ির ওপর পানির পিএইচ এর প্রভাব
ঝ) কার্বন-ডাই অক্সাইড: দিনের বেলায় কার্বন ডাই অক্সাইড কম থাকে কারণ সালোকসংশ্লেষণে কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহৃত হয় এবং রাতের বেলায় বৃদ্ধি পায়। পানিতে ৬০ মিলিগ্রাম/লিটার কার্বন ডাই অক্সাইড থাকলে চিংড়ি বাঁচতে পারে। কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পেলে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পায়।
ঞ) হাইড্রোজেন সালফাইড হাইড্রোজেন সালফাইড যেকোন জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। হাইড্রোজেন সালফাইডের যে কোন পরিমাণ চিংড়ির জন্য ক্ষতিকর। সাধারণত যখন পানির পিএইচ কম থাকে তখন হাইড্রোজেন সালফাইড বিষাক্ত হয়। পানি পরিবর্তন ও মাঝে মাঝে চুন প্রয়োগের মাধ্যমে হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
রোগাক্রান্ত চিংড়ির রোগের লক্ষণ ছাড়াও যে সব বাহ্যিক পর্যবেক্ষণ দ্বারা খামারে রোগের আক্রমণ প্রত্যক্ষ
করা যায়-
চিংড়ির রোগের প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ-
১) পরিবেশের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলির পরিবর্তনজনিত কারণ
ক) ভৌত গুণাবলীর পরিবর্তন
খ) রাসায়নিক গুণাবলীর পরিবর্তন
গ) জৈবিক গুণাবলীর পরিবর্তন
২) খাদ্যের অভাবজনিত কারণ
৩) প্রযুক্তি বাস্তবায়নগত অসুবিধা
বাগদা চিংড়িতে সাধারণত চার ধরনের রোগ দেখা যায়-
ক) ভাইরাসজনিত রোগ: ভাইরাস এক প্রকার অতিক্ষুদ্র জৈবকণা বা অনুজীব যা জীবিত কোষের ভিতরে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে। চিংড়ি চাষের সমস্যাগুলোর মধ্যে ভাইরাসজনিত রোগ অন্যতম। চিংড়ি চাষে ভাইরাসের আক্রমণে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং আমাদের দেশে ভাইরাসের কারণে চিংড়ির ব্যাপক মহামারী দেখা যায়। চিংড়ির ক্ষেত্রে প্রধান ভাইরাসজনিত রোগ গুলো হলো- White Spot Syndrome Virus (WSSV), Yellow Head Virus (YHV), Baculovirus penaei (BP), Monodon baculovirus (MBV), Infectious Myonecrosis Virus (IMNV), Hepatopancreatic Parvovirus (HPV)
খ) ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ: আদিকোষী অনুজীবদের একটি বিরাট অধিজগৎ ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গঠিত। ব্যাকটেরিয়া আণুবীক্ষণিক জীব যা খালি চোখে দেখা যায় না। চিংড়ির দেহে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ব্যাকটেরিয়া চরম ক্ষতিকর রোগ হিসেবে দেখা যায়। রোগ সৃষ্টিকারী প্রধান ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতিসমূহ হলো- Vibrio parahaemolyticus, V. harveyi, V. vulnificus, V. damsela, Aeromonas spp., Flavobacterium spp., alginalyticus প্রভৃতি। বাগদা চিংড়িতে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগগুলো হলো- Filamentous bacterial disease, Necrotising Hepatopancreatitis (NHP, Mycobacteriosis, Chitinolytic bacterial shell disease, Rickettsial infection প্রভৃতি।
গ) পরজীবীঘটিত রোগ: বিভিন্ন প্রকার এককোষী ও বহুকোষী পরজীবী আছে যারা চিংড়ির রোগ সৃষ্টি করে। এই পরজীবীগুলো চিংড়ির ত্বকের সাথে লেগে থেকে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি করে। ফুলকাতে আক্রমণ করে চিংড়ির ওজন কমিয়ে দেয় এবং অবশেষে মৃত্যু ঘটায়। Black / Brown gill disease হয়ে থাকে Zoothamnium, Epistylis, Vorticella প্রোটোজোয়ার জন্য। Gregarine disease হয়ে থাকে অ্যানিলিড পরজীবী Nematopsis spp. এর জন্য এবং Cotton shrimp এর জন্য দায়ী Agmasoma sp
ঘ) ছত্রাকজনিত রোগ: ছত্রাক প্রধানত চিংড়ির লার্ভা পর্যায়ে বেশি আক্রমণ করে। সাধারণত চিংড়ির ফুলকাতে আক্রমণ করে এবং শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। ফলে চিংড়ি মারা যায়। প্রধান সংক্রামক প্রজাতিগুলো গুলো- Lagenidium callinectes, L. marina, Sirolpidium spp. Pythium spp, Fusarium solani, Fusarium incarnatum প্রভৃতি।
ক) ভাইরাসজনিত রোগ
১) হোয়াইট স্পট বা চায়না ভাইরাস রোগ (White spot syndrome baculovirus-WSBV)
চিকিৎসা
২) সংক্রামক হাইপোডার্মাল এবং হেমাটোপয়েটিক নেক্রোসিস (Infectious hypodermal and hematopoietic necrosis -IHHN)
লক্ষণ
চিকিৎসা
৩) মনোডন ব্যাকুলোভাইরাস (Monodon Baculovirus MBV)
লক্ষণ
চিকিৎসা
৪) মস্তক হলুদ রোপ
লক্ষণ
চিকিৎসা
খ) ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ
১) নেক্রোটাইজিং হেপাটোপ্যানক্রিয়াটাইটিস (Necrotising hepatopancreatitis (NHP)
লক্ষণ
চিকিৎসা
২) কালো ফোটা রোগ (Black spot disease)
লক্ষণ
চিকিৎসা
৩) লেজ পঁচা রোগ (Tail rot disease)
চিকিৎসা
৪) ব্যাকটিরিয়াল সেপ্টিসেমিয়া (Bacterial septicemia)
লক্ষণ
চিকিৎসা
৫) কালো দাগ রোগ (Black spot / shell disease)
লক্ষণ
চিকিৎসা
গ) পরজীবীজনিত রোগ
১) ইপিকম্মেন্সাল রোগ (Epicommensal disease)
লক্ষণ
চিকিৎসা
২) ইন্টারোসাইটোজোন হেপাটোপেনাই (Enterocytozoon hepatopenai, EHP)
লক্ষণ
চিকিৎসা
ঘ) ছত্রাকঘটিত রোগ
১) ফুলকা পঁচা রোগ (Gill not disease)
লক্ষণ
চিকিৎসা
২) ছত্রাক রোগ (Fungal disease)
লক্ষণ
চিকিৎসা
৩) কালো ফুলকা রোগ (Black gill disease)
চিকিৎসা
৪) ফুসেরিয়াম রোগ (Fusarium sp.)
লক্ষণ
চিকিৎসা
ঙ) অপুষ্টিজনিত রোগ
১) খোসা নরম রোগ (Soft shell disease)
লক্ষণ
চিকিৎসা
২) দেহ খিচুনি রোগ (Body cramp disease)
লক্ষণ
চিকিৎসা
চ) বিবিধ রোগ
১) চিংড়ির গায়ে শেওলাজনিত সমস্যা (Extrenal fouling of shrimp)
লক্ষণ
চিকিৎসা
২) বুদবুদ রোগ (Gas bubble disease)
লক্ষণ
চিকিৎসা
১। পটাশ (KMnO4)
২। কপার সালফেট (Copper sulphate)
৩। ম্যালাকাইট গ্রিন (Malachite green
৪। মিথিলিন ব্লু (Methylene blue
৫। টিমসেন (Timsen )
৬। ফরমালিন (Formalin )
৭। অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Aluminium oxide)
৮। ব্লিচিং পাউডার (Bleaching powder)
৯। প্রোটোজোয়াসাইড (Protozoacide)
১০। বায়ো অ্যাকুয়া (Bio aqua )
১১। ট্রাফলান (Trafian)
এন্টিবায়োটিক
১। পলিমিক্সিন (Polymixin)
২। ইরিথ্রোমাইসিন (Erythromycin)
৩। অক্সিটেট্রাসাইক্লিন (Oxytetracycline)
৪। সারাফ্লোক্সাসিন (Sarafloxacin)
৫। সালফোনামাইড (Sulphonamide)
৬। কুইনোলোন (Quinolone)
৭। অ্যালবাজিন (Albazin
৮। টেট্রাসাইক্লিন (Tetracycline)
৯। ক্লোরামফেনিকল (Chloramphenicol
১০। মেট্রোনিডাজল (Metronidazole)
নিষিদ্ধ এন্টিবায়োটিক
১। সালফামেথোক্সাজল (Sulfamethoxazole)
২। ফিউরাজলিন (Furazolidone )
৩। ক্লোরামফেনিকল (Chloramphenicol
৪। নাইট্রোফুরান (Nitrofuran
৫। নিওমাইসিন (Neomycin)
৬। নালিডিক্সিক এসিড (Nalidixic acid)
ক) গভীরতাজনিত সমস্যা: চিংড়ি চাষে নার্সারিতে পানির গভীরতা ০.৬-০.৭ মিটার এবং পালন ঘেরে ১.০- ১.৫ মি. হওয়া উচিত।
খ) পানির উপর সবুজ ফাইটোপ্লাংকটন স্তর বেশি জৈব সার প্রয়োগে পানিতে ফাইটোপ্লাংকটন অনেক বেশি জন্মায়। ফলে পুকুরের পানির উপর সবুজ মোটা কাথার মতো স্তর দেখা যায়। সবুজ স্তর দূর করার জন্য প্রতি শতকে ১৫ গ্রাম (৩-৫ ফুট গভীরতা) তুঁতে প্রয়োগ করতে হবে।
গ) ইউগ্লেনাজনিত স্তর: ইউগ্লেনা নামক বহুকোষী প্রাণিতে ক্লোরোফিল নামক উপাদান থাকায় সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে লালচে বাদামী বর্ণ ধারণ করে। ইউগ্লেনা স্তরের উপর প্রতি কেজিতে ২০০ মিলি হারে পাথুরে চুন পানির সাথে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে।
ঘ) আয়রনজনিত স্তর: পানিতে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে আয়রনজনিত স্তর তৈরি হয়ে থাকে। এটি সবসময় লালচে বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। আয়রনজনিত স্তর দূর করার জন্য পুকুরে প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম চুন এবং ৫০-১০০ গ্রাম হারে ফিটকিরি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঙ) আগাছা নিয়ন্ত্রণ: যে কোনো ধরনের জলজ আগাছা আধা নিবিড় চিংড়ি চাষে একটি বিশেষ সমস্যা। তাই দৈনিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কায়িক শ্রম দ্বারা আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
চ) পানিতে শামুক ঝিনুকের প্রকোপ/উপদ্রব বেশি পরিমাণ শামুক ঝিনুকের উপস্থিতি লক্ষ্য করলে শক্ত ডালপালা বা তালপাতা পুকুরের পানিতে পুতে দেওয়া যেতে পারে। এসব ডালে শামুক আশ্রয় নিলে পাড়ে ভুলে মেরে ফেলতে হবে। এছাড়া শামুক নিয়ন্ত্রণের জন্য পুকুরে ব্লাক কার্প মাছ ছাড়া যেতে পারে,কারণ এরা খাবার হিসেবে শামুক গ্রহণ করে থাকে।
ছ) অবাঞ্ছিত মাছসহ রাক্ষুসে মাছ দূরীকরণ: পুকুরে বার বার জাল টেনে যত দূর সম্ভব সকল অবাঞ্ছিত মাছ ধরে ফেলতে হবে। এরপর অবশিষ্ট সব মাছ ধরে ফেলার জন্য প্রতি শতক আয়তন ও প্রতি ফুট পানির গড় গভীরতার জন্য ২৫-৩০ গ্রাম হারে রোটেনন প্রয়োগ করতে হবে।
জ) কাঁকড়ার উপদ্রব: যদি ঘেরের পানিতে কাঁকড়ার উপদ্রব হয় তাহলে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
আরও দেখুন...